ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ

ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও চিকিৎসা ব্যবস্থা

স্বাস্থ্য স্বাস্থ্য প্রযুক্তি
ভয়াবহ ডেঙ্গু জ্বরের বিস্তার ঠেকাতে সাধারন মানুষের ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও চিকিৎসা ব্যবস্থা সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানা দরকার।
যাতে সহজেই ডেঙ্গু সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরি করা যায় এবং ডেঙ্গুর মহামারির হাত থেকে দেশবাসীকে বাঁচানো যায়।

 

জেনে নিন জেনেরিক অনুযায়ী ওষুধের ব্র্যান্ড নাম
সাম্প্রতিক সময়ে ডেঙ্গুর প্রকোপ সাধারন নগরবাসীর উদ্বেগের কারন হয়ে দাড়িয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞগনের মতে,ডেঙ্গুর নিয়ন্ত্রন ও প্রতিরোধে মানুষের করনীয় অনেককিছুই আছে।
সামান্যকিছু সচেতনতা ও সর্তকতা ডেঙ্গু মহামারী থেকে মানুষকে বাঁচাতে পারে।
করোনা থেকে বাচতে এর লক্ষন ও প্রতিকার ব্যবস্থা জেনে নিন

 

ডেঙ্গু কি

ডেঙ্গু জ্বর (ডেঙ্গি) একটি এডিস মশা বাহিত ভাইরাস জনিত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় রোগ। এটি একটি মশাবাহিত রোগ।
এডিস মশার কামড়ের মাধ্যমে ভাইরাস সংক্রমণের ৩ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ দেখা দেয়।
জানতে চান কিভাবে ড্রাগ লাইসেন্স করতে হয়
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ গুলোর মাঝে রয়েছে জ্বর, মাথাব্যথা, বমি, পেশিতে ও গাঁটে ব্যথা এবং গাত্রচর্মে ফুসকুড়ি।

ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ

এডিস বাহক

২ থেকে ৭ দিনের মধ্যে সাধারণত ডেঙ্গু রোগী আরোগ্য লাভ করে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে রোগটি মারাত্মক রক্তক্ষরী রূপ নিতে পারে যাকে ডেঙ্গু রক্তক্ষরী জ্বর (ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার) বলা হয়।
এর ফলে রক্তপাত হয়, রক্ত অনুচক্রিকার মাত্রা কমে যায় এবং রক্ত প্লাজমার নিঃসরণ ঘটে।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে কখনোবা ডেঙ্গু শক সিনড্রোম দেখা দেয়। ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে রক্তচাপ বিপজ্জনকভাবে কমে যায়।
ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়াই বিক্রয় ও সেবনযোগ্য ওষুধের তালিকা
কয়েক প্রজাতির এডিস মশকী (স্ত্রী মশা) ডেঙ্গু ভাইরাসের প্রধান বাহক।যেগুলোর মধ্যে এডিস ইজিপ্টি মশকী প্রধানতম। ভাইরাসটির পাঁচটি সেরোটাইপ পাওয়া যায়।
ভাইরাসটির একটি সেরোটাইপ সংক্রমণ করলে সেই সেরোটাইপের বিরুদ্ধে রোগী আজীবন প্রতিরোধী ক্ষমতা অর্জন করে, কিন্তু ভিন্ন সেরোটাইপের বিরুদ্ধে সাময়িক প্রতিরোধী ক্ষমতা অর্জন করে।
এন্টিবায়োটিক রেসিস্ট্যান্সের ভয়াবহতা ও পরিনতি
পরবর্তীতে ভিন্ন সেরোটাইপের ডেঙ্গু ভাইরাস সংক্রমিত হলে রোগীর মারাত্মক জটিলতা দেখা দিতে পারে।
কয়েক ধরনের টেস্টের মাধ্যমে, যেমন, ভাইরাসটি বা এর আরএনএ প্রতিরোধী এন্টিবডির উপস্থিতি দেখেও ডেঙ্গু জ্বর নির্ণয় করা যায়।
বিএমআই ক্যালকুলেটর দিয়ে জেনে নিন আপনার উচ্চতার তুলনায় আদর্শ ওজন কত 

ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ

কিভাবে বুঝবেন আপনি ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন কি না ?৮০ % ক্ষেত্রে ডেঙ্গুর কোন উপসর্গ দেখা নাও দিতে পারে। তবে জ্বরকে এই রোগের সাধারন লক্ষন হিসাবে গন্য করা হয়। তাই জ্বরকে অবহেলা করা উচিত নয়।

ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ

ডেঙ্গুর লক্ষন

১০১ ডিগ্রি থেকে ১০২ ডিগ্রি তাপমাত্রা থাকতে পারে। জ্বর একটানা থাকতে পারে, আবার ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়ে দেবার পর আবারো জ্বর আসতে পারে।
এর সাথে শরীরে ব্যথা মাথাব্যথা, চেখের পেছনে ব্যথা এবং চামড়ায় লালচে দাগ (র‍্যাশ) হতে পারে। তবে এগুলো না থাকলেও ডেঙ্গু হতে পারে।

 

ডেঙ্গুর আরেক নাম হলো হাড়-ভাঙ্গা জ্বর।মাংসপেশী ও হাড়ের সংযোগস্থলের মারাত্মক ব্যথার কারনে এই রকম নামকরন।
কোমর ও মেরুদন্ডে ব্যথা হওয়া ডেঙ্গু জ্বরের বিশেষ লক্ষণ।
কিছু জরুরী ওষুধ সম্পর্কে জেনে রাখুন এবং বাসায় রাখুন

 

ডেঙ্গুর ক্লিনিক্যাল কোর্স

ডেঙ্গু রোগের তিনটি কোর্স বা স্তর রয়েছে।প্রাথমিক,প্রবল এবং আরোগ্য।প্রাথমিক কোর্সে শুধু জ্বর থাকবে।প্রাথমিক পর্যায়ে থাকে অত্যধিক জ্বর, প্রায়শ ৪০ °সে (১০৪ °ফা)-র বেশি, সঙ্গে থাকে সাধারণ ব্যথা ও মাথাব্যথা; এটি সাধারণতঃ দুই থেকে সাতদিন স্থায়ী হয়। এই পর্যায়ে ৫০-৮০% উপসর্গে র‍্যাশ বেরোয়।এই ক্যাটাগরির রোগীর হাসপাতালে যাবার দরকার নেই।

 

প্রবল পর্যায়ের ডেঙ্গু রোগীদের সবই স্বাভাবিক থাকে, কিন্তু শরীরে ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ প্রকাশ পায়।
যেমন তার পেটে ব্যথা হতে পারে, বমি হতে পারে প্রচুর কিংবা সে কিছুই খেতে পারছে না।
অনেক সময় দেখা যায়, দুইদিন জ্বরের পরে শরীর ঠাণ্ডা হয়ে যায়। ডেঙ্গুর সব ঘটনার ৫%-এরও কম ক্ষেত্রে শক (ডেঙ্গু শক সিনড্রোম) এবং হেমারেজ (ডেঙ্গু হেমারেজিক ফিভার)ঘটে।
তবে যাদের আগেই ডেঙ্গু ভাইরাসের অন্যান্য স্টিরিওটাইপ-এর সংক্রমণ ঘটেছে(“সেকেন্ডারি ইনফেকশন”) তারা বর্ধিত বিপদের মধ্যে রয়েছেন। এক্ষেত্রে হাসপাতাল ভর্তি হওয়াই ভালো।

 

এরপর আরোগ্য পর্যায়ে বেরিয়ে যাওয়া তরল রক্তপ্রবাহে ফেরত আসে।
এটি সাধারণতঃ দুই থেকে তিনদিন স্থায়ী হয়।এই উন্নতি হয় চমকে দেবার মত, কিন্তু এতে প্রচন্ড চুলকানি এবং হৃদস্পন্দনের গতি ধীরহতে পারে।
এই ক্যাটাগরির ডেঙ্গু জ্বর সবচেয়ে খারাপ। কিছু-কিছু ক্ষেত্রে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র বা আইসিইউ’র প্রয়োজন হতে পারে।

 

ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ প্রকাশ পেলে কি করবেন

চিকিৎসক রা বলছেন, সাধারন জ্বরকে উপেক্ষা না করে সর্তকতা অবলম্বন জরুরি।
জ্বরের সাথে শরীর ব্যথা, বমি ভাব অথবা প্রসাবে জ্বালা পোড়া করা ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ।
সুতরাং এই অবস্থায় রোগীর প্রথম কাজ হলো নিজেকে বিশ্রাম দিন।
জ্বর থাকাবস্থায় পরিপুর্ন বিশ্রামে থাকুন।পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষন করে ডেঙ্গুর পর্যায়টি বুঝার চেষ্টা করুন এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী ডাক্তারের শরনাপন্ন হোন অথবা হাসপাতালে ভর্তি হতে পারেন।

 

ডেঙ্গু জ্বরে কি কি খাওয়া যাবে

তরল জাতীয় খাবার খাবার বেশী করে খেতে হবে।ডাবের পানি,লেবুর শরবত,খাবার স্যালাইন ইত্যাদি বেশী পরিমানে খাওয়া ভালো।এসময় তরল জাতীয় খাবার রোগীর জন্য উপকারী।
এমন নয় যে শুধু পানিই খেতে হবে। তরল জাতীয় খাবারের পাশাপাশি স্বাভাবিক খাবার গ্রহন করতে পারেন।

 

ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ দেখা দিলে কি ওষুধ খাবেন

জ্বরের সাধারন যে ওষুধ গুলো আছে বিশেষ করে প্যারাসিটামল খাওয়া যেতে পারে।একজন স্বাভাবিক মানুষ দিনে সর্বোচ্চ চারটি প্যারাসিটামল খেতে পারে।
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ স্পষ্ট প্রকাশিত হলে জ্বর কমানোর জন্য প্যারাসিটামল খাওয়া যেতে পারে।
তবে যাদের হার্ট বা কিডনির সমস্যা আছে তারা প্যারাসিটামল খাওয়ার পুর্বে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহন করতে হবে।
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ প্রকাশ পেলে শরীরের ব্যথা কমানোর জন্য কোন ভাবেই এসপিরিন জাতীয় ওষুধ খাওয়া যাবে না।ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী এসপিরিন সেবন করলে রক্তক্ষরনের সম্ভাবনা থাকে।

 

ডেঙ্গু প্রতিরোধে করনীয়

ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা সাধারনত জুলাই মাসের দিকে বংশ বিস্তার করে ফলে এই সময়টাতে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশী দেখা দেয়।
ডেঙ্গু প্রতিরোধের প্রথম এবং প্রধান উপায় হচ্ছে এডিস মশার বংশ বিস্তারে বাধা প্রদান করা।
আর এভাবেই খুব সহজেই ডেঙ্গুর প্রকোপ থেকে বাঁচা সম্ভব। সামান্য কিছু সচেতনতা ভয়াবহ এই রোগ থেকে মানুষকে বাঁচাতে পারে।
এজন্য পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা ,বাড়ির আশে পাশে পানি জমতে না দেওয়া,ড্রেন নর্দমা পরিস্কার রাখা, ঝোপ ঝাড় পরিস্কার করার মাধ্যমে আমরা এডিস মশার বংশ বিস্তারে বাধা প্রদান করতে পারি।
কোন ভাবে কোথাও যেন তিন থেকে পাচ দিনের বেশী পানি জমে না থাকে সেদিকে সর্তক থাকা উচিত।

 

এডিস মশা রাতে কামড়ায় না ,এরা দিনের বেলাতে কামড়ায়।মোটামুটি সকাল বেলা এবং সন্ধার কিছু সময় আগে এডিস মশা তৎপর হয়ে উঠে।
সুতরাং দিনের বেলায় মশার কামড় থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে পারলে ডেঙ্গু প্রতিরোধ করা সম্ভব।
ডেঙ্গু বিষয়ে সচেতনতা তৈরিতে বাংলাদেশ সরকারের প্রচারনা দেখতে ভিজিট করুন

পরিশেষে

একটি বিষয় মাথায় রাখা দরকার সেটি হলো,সামান্য কিছু পার্থক্য থাকলেও ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ আর করোনার লক্ষন অনেকটাই মিলে যায়।
সুতরাং এক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরী।এখানে সামান্য ভুলে প্রানহানির আশংকা থেকে যায়।তাই জ্বরকে সাধারন জ্বর ভেবে অবহেলা না করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলে বিশেষজ্ঞ গন মনে করেন।

 

 

Comments are closed.