এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স

এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স পরিনতি, ভয়াবহতা এবং বাঁচার উপায়

স্বাস্থ্য স্বাস্থ্য প্রযুক্তি
মানবদেহে বা কোন যে কোন জীবজন্তুর দেহে অনুজীবের সংক্রমন নিরাময়ের ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়ে থাকে। অনিয়ন্ত্রিত এন্টিবায়োটিক ব্যবহারের ফলে সেটি ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমন নিরাময়ে ব্যর্থ হয়। এটাকেই এন্টি মাইক্রোবায়াল রেজিস্ট্যান্স বা AMR বলা হয়ে থাকে।
ঔষধের নাম,দাম ও কার্যকারিতা জানতে পড়ুন

এন্টি মাইক্রোবায়াল রেজিস্ট্যান্স বা AMR কি

AMR বা এন্টি মাইক্রোবায়াল রেজিস্ট্যান্স অর্থাৎ মানবদেহে এন্টিবায়োটিকের অকার্যকারিতা নিয়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিশেষজ্ঞ গন আশংকা প্রকাশ করছেন যে, এটিই মানব ইতিহাসের সবচেয়ে বড় মহামারী আকারে আবির্ভুত হতে পারে। যা সম্প্রতি ঘটে যাওয়া করোনা মহামারির চেয়েও অনেক গুন বড় আকার ধারন করতে পারে।

এন্টিবায়োটিক রেসিস্ট্যান্স

বিশ্বের সবচেয়ে বিপদজনক ১০ স্বাস্থ্য ঝুকির মধ্যে একটি হলো এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স। যার ফলে ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বহু মানুষের প্রানহানির কারন হয়ে দাড়িয়েছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এন্টিবায়োটিকের অপর নাম হচ্ছে এন্টি মাউক্রোবায়াল।
প্রেসক্রিপসন ছাড়াই সেবনযোগ্য ৩৯ টি ওটিসি মেডিসিন সম্পর্কে জানতে
এটি মানবদেহ বা পশু পাখির শরীরে বংশবিস্তার করা ব্যাকটেরিয়া , ছত্রাক বা পরজীবির বিরুদ্ধে কাজ করে বা মেরে ফেলে মানব দেহকে রোগমুক্ত করে থাকে।
কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এন্টিবায়োটিকের যথাযথ ব্যবহার না করার ফলে ব্যাকটেরিয়া বা পরজীবীগুলো তাদের রুপ পরিবর্তন করতে থাকে।

এন্টিবায়োটিক রেসিস্ট্যান্স

ফলে সেই ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে সাধারনত ব্যবহারযোগ্য এন্টি বায়োটিক গুলো আর কাজ করে না। ফলে আক্রান্ত মানবদেহ রোগমুক্ত হতে পারে না। সাধারন ভাষায় এটাকেই এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স বলা হয়ে থাকে।
কিছু জরুরী ওষুধ,যা ঘরে রাখলে বিপদে কাজে লাগে,জেনে নিন নাম গুলো
যে সকল ব্যাকটেরিয়া এন্টিবায়োটিক এর কার্যকারিতা উপেক্ষা প্রানীদেহে বেঁচে থাকতে সক্ষম তাদেরকে এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স ব্যাকটেরিয়া বলা হয়ে থাকে।

 

এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের পরিনতি ও ভয়াবহতা

একটি আক্রান্ত প্রানীদেহ যখন এন্টিবায়োটিক গ্রহন করার পরও সংক্রমন সেরে উঠে না তখন সেটি ভয়াবহ আকার ধারন করে। প্রানীদেহে বাসা বাধা ব্যাকটেরিয়া বা অনুজীব স্বাভাবিক নিয়মে বংশ বিস্তার শুরু করে ফলে আক্রান্ত মানুষ বা প্রানীটি ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হয়।

 

একটা পর্যায়ে এটি মহামারির আকার ধারন করতে পারে। যখন এন্টিবায়োটিক কাজ না করার ফলে মানুষ সাধারন অসুখে মৃত্যু মুখে পতিত হতে থাকবে। যতক্ষন না পরিবর্তিত অনুজীবের বিরুদ্ধে কার্যকরী নতুন কোন এন্টিবায়োটিক আবিস্কার না হচ্ছে।
বিএমআই ক্যালকুলেটর দিয়ে জেনে নিন আপনার শরীরের আদর্শ ওজন কত
সাম্প্রতিক সময়ের এক গবেষনায় দেখা গেছে সাধারন ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া ও আরোও কিছু সাধারন অসুখের ক্ষেত্রে এন্টিবায়োটিক সঠিক ভাবে কাজ করছে না।
এই গবেষনার ফল অনুযায়ী, ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে নতুন এক ধরনের এনজাইমের উপস্থিতি পাওয়া গেছে, যা প্রচলিত এন্টিবায়োটিকের কার্যকারিতাকে অক্ষম করে দিচ্ছে।

এন্টিবায়োটিক রেসিস্ট্যান্স

আশ্চর্যের বিষয় হলো , ব্যাকটেরিয়াগুলো সময়ের সাথে সাথে নিজেদের পরিবর্তন করে ফেলছে এবং প্রচলিত এন্টিবায়োটিকের কার্যকারিতাকে অক্ষম করে দিচ্ছে।
এরা প্রতিনিয়ত নিজেদের সুরক্ষা বলয়কে আরোও শক্তিশালী করে তুলছে। আশংকার কারন হলো, এভাবে চলতে থাকলে মানুষের রোগ হবে , ওষুধ সেবন করবে কিন্তু কোন লাভ হবে না।
মহামারি করোনার পাশাপাশি শুরু হয়েছে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ,জেনে রাখুন
দেহের ভিতরে দানা বাধা অনুজীব আরোও শক্তিশালী হয়ে নিজেদের বংশ বিস্তার করতে থাকবে । একটা পর্যায়ে রোগী মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়বে। যা বিশ্বের সর্ব্বোচ্চ পর্যায়ের মহামারীর চেয়ে কোন অংশেই কম নয়।
বরং আরোও আশংকার কারন হলো আমরা জানি যে, গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর ফলে উত্তরমেরুর বরফ গলতে শুরু করেছে। লক্ষ কোটি বছর পূর্বের বরফচাপা নাম না জানা কোন অনুজীব যদি বের হয়ে আসে তাহলে অবস্থা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে বা প্রচলিত চিকিৎসা ব্যবস্থা এটিকে কিভাবে সামাল দেবে এটি অনুমান করাও কঠিন।
প্রানঘাতি করোনা সংক্রমন থেকে বাঁচতে জেনে নিন করোনার লক্ষন, প্রতিকার এবং প্রতিরোধের উপায় সমূহ

এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স হওয়ার কারন

সাধারনত আমরা যেকোন অসুখ বিসুখে ডাক্তারের শরনাপন্ন হই বা নিজেরা জ্ঞানের বহর অনুযায়ী ওষুধ সেবন করি, ফলে রোগটি সেরে যায়।
কিন্তু অবস্থা এমন যে ,আপনি অনুজীব দ্বরা আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হবেন ,যথারীতি ওষুধ সেবন করবেন কিন্তু আপনার রোগ সারবে না ।
এটিই হচ্ছে এন্টি বায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের মূল পরিনতি। প্রশ্ন হতে পারে , এর জন্য দায়ী কে? বা কার কারনে এমন গুরুতর সমস্যার সৃষ্টি হলো?
সোজা উত্তর হলো, কেউ একক ভাবে দায়ী না হলেও এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের মূল কারন আমাদের মতো মানুষ। যারা কারনে অকারনে এন্টিবায়োটিক সেবন করে সামান্য আরাগ্য লাভ করার পরে ডোজ সম্পন্ন হওয়ার আগেই এন্টিবায়োটিক খাওয়া ছেড়ে দেয়।

এন্টিবায়োটিক রেসিস্ট্যান্স

প্রজাতি ভেদে ব্যাকটেরিয়া নিধনের জন্য প্রতিটি এন্টিবায়োটিক ওষুধের নির্দিষ্ট ডোজ থাকে। আরোগ্য লাভ করলেও সেই পূর্ণ মাত্রার ডোজ সম্পন্ন করতে হয়। কিন্তু অজ্ঞতা বশত বা আর্থ সামাজিক অবস্থার কারনে আমরা সামান্য আরোগ্য লাভ করার পর এন্টি বায়োটিকের ডোজ সম্পন্ন করি না।
ফলে পরবর্তীতে একই অসুস্থায় সেই এন্টিবায়োটিক আর সঠিকভাবে কাজ করবে না। অথবা কিছু ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক কারনেও কারো কারো শরীরে এন্টি বায়োটিক রেজিস্ট্যান্স হতে পারে।

 

এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স হওয়া থেকে বাঁচার উপায়

বিশেষজ্ঞদের মতে , এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের ভয়বহতা থেকে বাঁচতে সচেতনতার কোন বিকল্প নেই। বিশেষ করে ওষুধ সেবনের ক্ষেত্রে সাবধানতা অবল্মবন করা জরুরী ।
অনিয়ন্ত্রিত এন্টিবায়োটিকের ব্যবহার রোধ করার কোন বিকল্প নেই। অসুস্থতার ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া এন্টিবায়োটিক গ্রহন করা থেকে বিরত থাকতে হবে এবং ডাক্তারের নির্দেশিত পূর্ণ মাত্রার এন্টিবায়োটিকের ডোজ সম্পন্ন করতে হবে।

 

এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স এবং আমাদের করনীয় সম্পর্কে আরোও জানতে বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের ওয়েবসাইট ভিজিট করে দেখুন।

 

 

Comments are closed.