এসইও এর ৩ টি ধাপ হলো অনপেজ এসইও,অফপেজ এসইও এবং টেকনিক্যাল এসইও। অন পেজ এসইও,সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন এর প্রথম ধাপ হলো আজকের পোষ্টের বিষয়বস্তু।
সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন কি
এসইও হলো একটি সম্বনিত পদ্ধতি,যার দ্বারা সার্চ ইঞ্জিন গুলোর অভ্যন্তরীন প্যারামিটারগুলো ব্যবহার করে ওয়েবসাইট বা এর কোন একটি পেজকে সার্চ ইঞ্জিন রেজাল্ট পেজের কোন অবস্থানে দেখাবে তা নিশ্চিত করা যায়।
আসুন প্রথমে সার্চ ইঞ্জিন এবং সার্চ রেজাল্ট সম্পর্কে জেনে নিই।
সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশনের বিস্তারিত পড়তে দেখুন
সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন কি? সম্পুর্ন এসইও গাইড বাংলায়
সার্চ ইঞ্জিন
ওয়েব থেকে কোন তথ্য খুজে বের করার মাধ্যম হলো সার্চ ইঞ্জিন।জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন সমুহ হলো গুগল,ইয়াহু,বিং,আস্ক,ডাক ডাক গো ইত্যাদি।
ওয়েবে ছড়িয়ে থাকা কোটি কোটি ওয়েবসাইট গুলোর তথ্য শ্রেনীবদ্ধ ভাবে সার্চ ইঞ্জিন গুলোর কাছে ইনডেক্স করা থাকে।
মানুষ যখন কোন নির্দিষ্ট বিষয়ে ওয়েবে সার্চ করে,সার্চ ইঞ্জিন তখন অই বিষয়ের উপর তার তালিকায় থাকা ওয়েবসাইট গুলোর মধ্য থেকে বাছাই করে সেরা ফলাফল গুলো প্রদর্শন করে থাকে।
সার্চ রেজাল্ট
আপনি গুগলে “বাংলা ব্লগ” লিখে সার্চ দিলেন,তার প্রতিক্রিয়ার গুগল আপনাকে অনেক গুলো ওয়েবসাইটের তালিকা প্রদর্শন করলো।
এটাই হলো সার্চ রেজাল্ট।স্বভাবই আপনি গুগল প্রদর্শিত সার্চ রেজাল্ট পেজের প্রথম দিকে থাকা তালিকা গুলো থেকে আপনার উত্তর খোজার চেষ্টা করবেন।
এই তালিকার প্রথম দিকে নিজের ওয়েবসাইটকে রাখতে চাইলে সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশনের কোন বিকল্প নেই।
মুলত সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন হয় অনপেজ আর অফপেজ,কিন্তু আরেকটি বিষয় থাকে তাহলো টেকনিক্যাল এসইও নামে পরিচিত।
আজকের পোষ্টের মূল বিষয়বস্তু হলো অনপেজ এসইও।
অনপেজ এসইও
ওয়েবসাইট বা ওয়েবপেজ কে সার্চ ইঞ্জিনের উপযোগী করে তোলার জন্য যে প্রক্রিয়া ব্যবহার করা হয় সেটিই হলো অনপেজ এসইও।
আদতে অনপেজ এসইও হলো ওয়েব সাইটের ভিতরের কাজ। সার্চ ইঞ্জিন উপযোগী করে গড়ে তুলতে যে পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করা হয় সেগুলোই হলো অনপেজ এসইও।অনপেজ পেজ হলো সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশনের মধ্যমনি। সার্চ ইঞ্জিনে র্যাঙ্কিং এর ক্ষেত্রে অন্যতম বড় ফ্যাক্টর।
অনপেজ এসইও এর কাজের ধাপ
ওয়েবসাইট বা ওয়েবপেজ কে সার্চ ইঞ্জিনের উপযোগী করে তোলার জন্য যে প্রক্রিয়া ব্যবহার করা হয় সেটিই হলো অনপেজ এসইও।
এই প্রক্রিয়ার কাজ গুলো সব ওয়েবসাইটের ভিতরেই করা হয়ে থাকে।অনপেজ এসইও তে সর্বাধিক বিবেচ্য বিষয়গুলো হলো নিম্নরুপঃ
১। কীওয়ার্ড
২। ইউ আর এল
৩। মেটা ডিসক্রিকশন
৪। ইন্টারনাল/এক্সটারনাল লিংক
৫। অল্টার ট্যাগ
৬। আর্টিকেল/কনটেন্ট
৭। এইচ ট্যাগের ব্যবহার
৮। রিডেবিলিটি
মোটামুটি এই কয়েকটি বিষয় কে সামনে রেখে একটি পেজ অপ্টিমাইজেশনের কাজ করা হয়ে থাকে।
এখন এই বিষয় গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।
১। কীওয়ার্ড
অনপেজ এসইও এর প্রধান বিষয়বস্তুই হলো কীওয়ার্ড। কীওয়ার্ড কে কেন্দ্র করে পেজের অন্যান্য বিষয় গুলো গঠন হবে।
যেমন-আর্টিকেল,আর্টিকেল স্ট্রাকচার,ইন্টারনাল লিংক,এক্সটারনাল লিংক এসব কিছুর সাথে কীওয়ার্ড জড়িত।
কীওয়ার্ড রিসার্চ বা বাছাই প্রক্রিয়াটা অনেক গুরুত্বপুরন।সেটা নিয়ে আলাদা একটা পোষ্ট হতে পারে।
এখানে কীওয়ার্ড এর ব্যবহারবিধি নিয়ে কথা বলবো। এক সময় ভাল র্যাংক পাবার জন্য কনটেন্ট গুলো কীওয়ার্ড নির্ভর করে তৈরি করা হতো।
কিন্তু সার্চ ইঞ্জিনের এলগারিদমে পরিবর্তনের ফলে সেই ধারনা এখন অকার্যকর।এখন অতিরিক্ত কীওয়ার্ড এর ব্যবহারকে অভার অপ্টিমাইজ হিসাবে গন্য করা হয়।
সুতরাং পুরা কনটেন্টের ভিতরে ফোকাস কীওয়ার্ড ২ বার ব্যবহার করলেই যথেষ্ট।কোন ক্ষেত্রে পুরা আর্টিকেল এ কোথাও ফোকাস কীওয়ার্ড ব্যবহার না করেও সার্চ ইঞ্জিন রেজাল্টের প্রথমে স্থান পাওয়া সম্ভব।
যদি এলএসআই এবং ভ্যারিয়েশন ঠিক থাকে আর কনটেন্ট কোয়ালিটি ভালো হয় তাহলেই ভালো র্যাংক পাওয়া সম্ভব।
এসবকিছুই নিয়ন্ত্রন করে গুগলের র্যাংক ব্রেইন ।
২। ইউ আর এল
কনটেন্ট বা আর্টিকেল পেজের ইউ আর এল টা হতে হবে এসইও ফ্রেন্ডলী।কারন সার্চ ইঞ্জিন বট ইউ আর এল পড়ে আর্টিকেল এর বিষয়বস্তু সম্পর্কে বুঝার চেষ্টা করে।
মুলত আর্টিকেল এর শিরোনামটি স্বয়ংক্রিয় ভাবে ইউ আর এল হিসাবে সেট হয়ে যায়।কিন্তু এটা পরিবর্তন করা জরুরী।
অনেক সময় শিরোনামের মধ্যে সংখ্যা বা সাল থেকে যায়,যা কখনোই ইউ আর এল এর মধ্যে ব্যবহার করা উচিত নয়।
আর্টিকেল পোষ্ট করার সময় ইউ আর এল পরিবর্তন করা সবচেয়ে ভালো।ডোমেইন ন্যাম এর পরের অংশটুকু হলো আর্টিকেলের লিংক।
এটি বেশী বড় করা ঠিক নয়।যত ছোট রাখা যায় ততই ভালো।অনেকে মনে করেন ইউ আর এল এ কীওয়ার্ড ব্যবহার করলে ভালো কাজে দেয়।
৩। মেটা ডিসক্রিপশন
মেটা ডিসক্রিপশন হলো পুরা আর্টিকেল এর সংক্ষিপ্ত বর্ণনা। যা সার্চ ইঞ্জিনকে আর্টিকেল এর বিষয়বস্তু সম্পর্কে ধারনা পেতে সাহায্যে করে থাকে।
৪। ইন্টারনাল/এক্সটারনাল লিংক
ইন্টারনাল লিংক হচ্ছে আর্টিকেলের মধ্যে সাইটের অন্য আর্টিকেলের যোগসুত্র করা।
এটা সাইটের অথরিটি বাড়ার ক্ষেত্রে কাজ করে।
ইন্টারনাল লিংক এসইও ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটা না করলে এসইও এর প্রভাব পড়বে।
তবে এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যে,লিংক করা আর্টিকেল গুলো যেন একই বিষয় সম্পর্কিত হয়।ক্যাটাগরি ফলো করে নির্দিষ্ট নিয়মে ইন্টারলিংক করার একটি পদ্ধতি আছে যাকে সিলো বলা হয়।
ইন্টারনাল লিংক করার ক্ষেত্রে এংকর টেক্সট ভেরিয়েশন রাখাটা জরুরী।ফোকাস কীওয়ার্ড কে এংকর টেক্সট হিসাবে ব্যবহার করা যাবে না।
এংকর টেক্সট শুধুমাত্র ভিজিটরকে লিংকে নিয়ে যাওয়ার জন্যেই নয় বরং সার্চ ইঞ্জিন বট কেও নির্দেশনা দেওয়া থাকে লিংক ভিজিট করার জন্য।
সুতরাং এংকর টেক্সট দেওয়ার ক্ষেত্রে একটু সতর্ক থাকা প্রয়োজন।লিংকে ভিজিটরকে আনতে পারলে সেটা সাইটের জন্য অবশ্যই সুফল বয়ে আনবে।
বিশেষ করে সাইটের ভিজিটর এনগেজমেন্ট বাড়ার সাথে সাথে সাইটের বাউন্স রেট টাও ভালো থাকবে।
আর্টিকেলের মধ্যে এক্সটারনাল লিংক থাকাটা ভালো।রেফারেন্স হিসাবে এটি খুব ভালো কাজে দেয়।
তবে এক্সটারনাল লিংক এর ক্ষেত্রে উইকিপিডিয়া ইউ এস রিসার্চ সেন্টার টাইপের লিংক না দেওয়াই ভালো।
পাশাপাশী এক্সটারনাল লিংক দেওয়া সাইটের অথরিটির মুল্যায়ন করে লিংক করা উচিত।
৫। ইমেজ অল্টার ট্যাগ
আর্টিকেলের প্রত্যকটা ইমেজের সাথে অল্টার ট্যাগ ইউজ করা জরুরী। অনেকেই অল্টার ট্যাগ ব্যবহারের ক্ষেত্রে উদাসীন।
কিন্তু এসইও এর ক্ষেত্রে খুব অবশ্যই প্রয়োজনীয় একটা বিষয়।সুতরাং সব ইমেজের সাথে অবশ্যই অল্টার ট্যাগ ব্যবহার করতে হবে।
৬। কনটেন্ট/আর্টিকেল
এক্ষেত্রে একটা কথা প্রচলিত আছে সেটা হলো কনটেন্ট ই হলো রাজা।কনটেন্ট/আর্টিকেল যদি ঠিক থাকে তবে গুগল বট সেটাকে ঠিক চিনে নিবে।
সঠিক ভাবে এসইও করার জন্য অবশ্যই কনটেন্টের আকার,গঠন এর দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
কনটেন্টের বিষয়বস্তু ঠিক রেখে সেটাকে সহজ ভাষায় অডিয়েন্সের বুঝার মতো করে লিখতে হবে।
কঠিন কঠিন শব্দের ব্যবহার করে কনটেন্টের মান বাড়ানো যায় না।সেটা অডিয়েন্সের বোধগম্য হতে হবে।এক্সপার্ট দের মতে একটি আর্টিকেলে সর্বনিম্ন ৫০০+ শব্দ ব্যবহার করা ভালো।
৭। এইচ ট্যাগের ব্যবহার
সার্চ ইঞ্জিনের উপযোগী করে একটি আর্টিকেল সাজাতে গেলে তার ভিতরে সঠিকভাবে এইচ ট্যাগের ব্যবহার অবশ্যই জরুরী।
আর্টিকেলের ভিতরে যেসব হেডিং বা সাব হেডিং ব্যবহার করা হয় সেগুলোই হলো এইচ ট্যাগ।আপনার আর্টিকেলের শিরোনাম স্বয়ংক্রিয়ভাবে (ওয়ার্ড প্রেসে) H1 ট্যাগ বলে বিবেচিত হবে।
তাহলে মুল আর্টিকেলে প্রথমে আসবে H2 ট্যাগের ব্যবহার।তারপর আসবে পর্যায়ক্রমে H3/H4 ট্যাগের ব্যবহার।
অর্থাৎ মুল টপিক থেকে যতো ভিতরে যাওয়া হবে হেডলাইন তত ছোট হবে।H1 ট্যাগ একবার ব্যবহার করাটা ভালো অভ্যাসতবে প্রয়োজনে একাধিকবার ব্যবহার করা যেতে পারে।
আর বাকী ট্যাগ গুলো আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী যতবার খুশি ব্যবহার করতে পারেন।
৮। রিডেবিলিটি
ছোট ছোট প্যারায় লিখলে তা পড়তে অডিয়েন্সের জন্য সুবিধার হয়।সুতরাং আর্টিকেল লেখার সময় সেই বিষয়টি মাথায় রেখে আর্টিকেল লেখা উচিত।
একটা লাইনে ৯/১২ টি শব্দ থাকতে পারে আর অক্ষর হতে পারে ৫০/৬০ টি।একটি প্যারা সর্বাধিক ২০ শব্দের মধ্যে রাখলে ভালো হয়।
আর্টিকেল লেখার সময় সেটি এমন ভাবে লেখা উচিত যাতে সেটা কনভারসেশনালী হয়।
যাতে মনে হয়,আপনি রিয়েল লাইফে কাউকে কোন বিষয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছেন।
সার্চ কনসোলে সাইট সাবমিট করার নিয়ম জানতে পড়ুন
ব্যাকলিংক কি? কিভাবে ব্যাকলিংক তৈরি করতে হয়
অনপেজ এসইও এর জন্য শেষকথা
অনেকে বলে থাকেন,সার্চ ইঞ্জিন কনটেন্ট ঠিকই চিনে নিতে পারে।কথা সত্য।যদি আপনার কনটেন্ট তথ্যবহুল হয় এবং তাতে যদি অডিয়েন্সের চাহিদা বা আগ্রহ প্রকাশ পায় তবে সার্চ ইঞ্জিন সেই কনটেন্টকে অবশ্যই ভালো স্থান দেবে।