দেশে প্রথমবারের মতো সাধারন জনসাধারণের জন্য চালু করা হলো সর্বজনীন পেনশন কর্মসুচি। এর আওতায়। ১৮ বছর থেকে ৫০ বছর বয়সের বাংলাদেশী নাগরিক নির্দিষ্ট হারে চাঁদা দিয়ে এই পেনশন কর্মসুচীর আওতায় আসতে পারবে।
তবে বিশেষ বিবেচনায় ৫০ বছরের বেশী বয়সী মানুষদের জন্য একটি সুযোগ রাখা হয়েছে, সেক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ১০ বছর চাদা প্রদান করতে পারলে তিনি বা তার নমিনি পেনশনের পূর্ন সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।
টাকা পে ডেবিট কার্ড
তবে প্রকাশ থাকে যে, সরকারী বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্টানে কর্মরত কেউ সর্বজনীন পেনশন স্কিমের সুবিধা নিতে পারবে না
প্রবাস, প্রগতি, সুরক্ষা ও সমতা নামের আলাদা ৪ টি কর্মসূচির মাধ্যমে চাঁদা প্রদান করে ৬০ বছর বয়স পূর্ন হলে পেনশন সুবিধা পাওয়া শুরু করবে।
জন্ম নিবন্ধন করা নিয়ে আর ঝামেলা নয়, এবার অনলাইনে চেক করে নিন
সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচির আওতায় শুধুমাত্র প্রবাসীদের জন্য রয়েছে প্রবাস স্কীম।বেসরকারি চাকুরীজীবিদের জন্য আছে প্রগতি স্কীম। কৃষক, মজুর, রিকশাচালক, জেলে, কামার, তাঁতী ইত্যাদি স্বপেশায় কর্মরতদের জন্য সুরক্সা স্কীম।
আর নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য রইলো সমতা স্কীম। এর যে কোন একটি স্কীমের আওতায় আসতে পেনশনারের বয়স। ১৮ হতে হবে।
সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি এর জন্য কিভাবে রেজিস্ট্রেশন করবেন
ইউপেনশন নামের একটি ওয়েবসাইট থেকে রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। যা প্রতিটি ধাপে ধাপে এখানে বর্ননা করা হবে। প্রতিটি ধাপ সঠিক ভাবে অনুসরণ করে আপনিও খুব সহজেই রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারবেন।
সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচির জন্য সরকার পৃথক একটি ওয়েবসাইট চালু করেছে। www.upension.gov.bd নামের ওয়েবসাইটে পেনশন সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য উপাত্ত পাওয়া যাবে
যারা অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করতে চান তারা এই সাইটে কয়েকটি ধাপ অনুসরন করে রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারবেন। এছাড়াও আপনি সরাসরি সোনালী ব্যাংকের যেকোন শাখা থেকে নির্দিষ্ট ফর্ম পুরন করে এই পেনশন কর্মসুচির আওতায় আসতে পারবেন।
জিডি করার জন্য যেতে হবে না থানায়
সরাসরি ব্যাংক থেকে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করার জন্য নিম্নের আবেদন ফরমটি যথাযথ ভাবে পুরন করে ব্যাংকে জমা দিতে হবে। আবেদন ফরমের PDF ফাইলটি মিম্নে দেওয়া হলো।
সর্বজনীন পেনশন স্কিমের আবেদন ফরম (PDF)
রেজিস্ট্রেশন করতে যা যা লাগবে
১। জাতীয় পরিচয় পত্রের নাম্বার
২।জন্ম তারিখ
৩। সক্রিয় মোবাইল নাম্বার
৪। ইমেইল আইডি
৫। ব্যাংক একাউন্টের তথ্য
৬। নমিনির তথ্য
৭।নিজের বার্ষিক আয়ের তথ্য
সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচির রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া
সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য সর্বপ্রথম আপনাকে জাতীয় পেনশন কতৃপক্ষের নির্ধারিত ওয়েবসাইটে ঢুকতে হবে।
উপরের ডান কোনায় পেনশনার রেজিস্ট্রেশন অপশনে ক্লিক করতে হবে। এখানে আপনি একটি প্রত্যয়ন পত্রে “আমি সম্মত আছি সম্মতি প্রদান করতে হবে।
সম্মতি প্রদানের পর আপনার সামনে মূল রেজিস্ট্রেশন ফরমটি আসবে। এখানে প্রথমে আপনার পছন্দসই একটি স্কিম নির্বাচন করতে হবে, জাতীয় পরিচয় পত্রের ১০,১৩ অথবা ১৭ সংখ্যার নাম্বারটি প্রদান করতে হবে।
এরপর আপনার জন্ম তারিখ দিতে হবে। মোবাইল নাম্বার অবশ্যই দিতে হবে তবে ইমেইল আইডি প্রদান করা আবশ্যিক নয়। এরপর সঠিকভাবে ক্যাপচা পুরন করে “পরবর্তী পেইজ ” বাটনে ক্লিক করতে হবে।
সঠিকভাবে ফরমটি পূরন করলে আপনার দেওয়া ফোন নাম্বারে একটি ৬ সংখ্যার ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড (Otp) ম্যাসেজ যাবে।
উপরে দেওয়া ছবির বক্সে সেই ৬ টি সংখ্যা সঠিক ভাবে বসাতে হবে এবং “পরবর্তী পেইজ ” বাটনে ক্লিক করতে হবে।
এবার ব্যক্তিগত তথ্য নামের ধাপে আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র অনুযায়ী তথ্য গুলো দেখতে পাবেন। অসম্পূর্ণ তথ্যগুলো দিয়ে ফরমটি সম্পূর্ণ করতে হবে। এবার ডান দিকের “পরবর্তী ” বাটনে ক্লিক করে আপনার স্কিম সংক্রান্ত তথ্য গুলো প্রদান করতে হবে।
ট্রেনের অপেক্ষায় আর ষ্টেশনে বসে কষ্ট করতে হবে না, একটি এসএমএসে জেনে নিন কাংক্ষিত ট্রেনের বর্তমান অবস্থান
আপনার স্কিম সংক্রান্ত তথ্য যেমন মাসিক চাদার পরিমান, চাদা পরিশোধের ধরন সংক্রান্ত তথ্য প্রদান করে “পরবর্তী ” বাটনে ক্লিক করে আপনার ব্যাংক তথ্য প্রদান করতে হবে।
এখানে ব্যাংক হিসাবের নাম, একাউন্ট নাম্বার, হিসাবের ধরন, ব্যাংক নাম এবং ব্যাংক শাখার নাম সঠিক ভাবে উল্লেখ করে “পরবর্তী ” বাটনে ক্লিক করে নমিনি সংক্রান্ত তথ্য প্রদান করতে হবে।
এরপর নমিনির জাতীয় পরিচয় পত্র, জন্ম নিবন্ধন অথবা পাসপোর্ট নাম্বারের একোন একটি প্রদান করতে হবে। নমিনির জাতীয় পরিচয় পত্র যদি থাকে তাহলে তার নাম্বার ও জন্ম তারিখ প্রদান করতে হবে, তারপর “নমিনি সিলেক্ট করুন ” অপশনে ক্লিক করলে নমিনির জাতীয় পরিচয় পত্র অনুযায়ী যাবতীয় তথ্য আপনি দেখতে পাবেন।
এবার নমিনির সাথে আপনার সম্পর্ক, নমিনির প্রাপ্যতার হার এবং মোবাইল নাম্বার দিয়ে সঠিক ভাবে ফরমটি সম্পূর্ণ করতে হবে।উল্লেখ্য, একইভাবে একাধিক নমিনি যুক্ত করা যাবে।
এবার “পরবর্তী ” বাটনে ক্লিক করে আপনি সম্পুর্ন ফরমটি দেখতে পাবেন। পুর্বের দেওয়া তথ্য যাচাই, বাছাই এবং সংশোধন করতে পারবেন। সর্বশেষ আপনি সম্পূর্ণ ফরমটি ডাউনলোড করে নিতে পারবেন।
সবশেষে “সম্মতি প্রদান ” চেক বক্সে টিক দিয়ে “আবেদন সম্পন্ন করুন ” বাটনে ক্লিক করে আপনার রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে।
এবার আপনার সামনে পেমেন্ট পেজ আসবে, এখানে স্কিম সংক্রান্ত তথ্য গুলো দেখাবে,
সবকিছু ঠিক থাকলে “পেমেন্ট করুন ” বাটনে ক্লিক করতে হবে। আপনি সরাসরি সোনালী ব্যাংকের একাউন্টে চাদার টাকা জমা করতে পারেন।
এছাড়াও ডাচ বাংলা ব্যাংকের নেক্সাস কার্ড, আমেরিকান এক্সপ্রেস, ভিসা বা মাস্টারকার্ড বা মোবাইল ব্যাংকিং যেমন, বিকাশ, রকেট নগদ, উপায় এর যেকোন একটির মাধ্যমে চাদার টাকা পরিশোধ করতে পারবেন।
সফল ভাবে পেমেন্ট সম্পন্ন হলে আপনার প্রদত্ত মোবাইল নাম্বারে একটি স্বাগত ম্যাসেজ আসবে। সেখানে আপনি ১৩ সংখ্যার একটি পেনশনার আইডি দেখতে পাবেন। এই ম্যাসেজের মাধ্যমে আপনার চাদার টাকা গৃহীত হয়েছে বলে নিশ্চিত করা হবে।
এবার আপনি ইউজার আইডি তৈরি করুন নামের একটি পেজ দেখতে পাবেন। ম্যাসেজে প্রাপ্ত ১৩ সংখ্যার পেনশনার আইডিটি আপনার ইউজার আইডি হিসাবে গন্য হবে, আপনাকে শুধু ৬ সংখ্যার একটি শক্ত পাসওয়ার্ড তৈরি করে নিতে হবে। কাজ সম্পন্ন হলে “ইউজার তৈরি করুন ” বাটনে ক্লিক করতে হবে।
“আপনার ইউজার আইডি তৈরি হয়েছে ” মর্মে একটি ম্যাসেজ দেখতে পাবেন। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে “ঠিক আছে ” বাটনে ক্লিক করলে আপনি সরাসরি লগইন পেজ দেখতে পাবেন লগইন পেজে আপনার ইউজার আইডি পাসওয়ার্ড এবং ক্যাপচা পুরন করে পেনশনার হিসাবে লগইন করতে হবে।
তাহলে আপনি ব্যক্তিগত ড্যাশবোর্ড দেখতে পাবেন। ব্যক্তিগত ড্যাশবোর্ডে আপনি স্কিম সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য উপাত্ত সমূহ দেখতে পাবেন। এখানে আপনি চাদার পরিমান বা স্কিম পরিবর্তন বা নমিনি পরিবর্তন করার সুযোগ পাবেন। এই ড্যাশবোর্ডের মাধ্যমে আপনি চাদা পরিশোধ এবং যাবতীয় বিবরন দেখতে পাবেন।
উপসংহার
সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচিতে সব ধরনের মানুষের অংশগ্রহনের সুবিধার্থে অনলাইন বা সরাসরি সোনালী ব্যাংকের যেকোন শাখায় গিয়ে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করার সুযোগ থাকছে।
তবে অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করার পূর্ব শর্ত হলো রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ার সবগুলো ধাপ একই সময়ে সম্পন্ন করতে হবে। কোন ধাপ অসম্পূর্ণ রেখে দিলে পুনরায় প্রথম থেকে শুরু করতে হবে।
সাধারন মানুষের জীবন সায়াহ্নে অবহেলা, নিপীড়ন থেকে বাচতে সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি নিঃসন্দেহে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
Comments are closed.