২৬/০৩/২০২২ তারিখ থেকে বাংলাদেশ রেলওয়ের ই-টিকেটিং সিস্টেমে অনলাইনে ট্রেনের টিকিট ক্রয় করার নতুন নিয়ম কার্যকর করা হয়েছে। তাই আজকের পোষ্টে অনলাইন থেকে ট্রেনের টিকিট কাটার নিয়ম সহজভাবে তুলে ধরা হবে ।
যাত্রী সাধারনের সুবিধার জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ে তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটটি নতুন ভাবে সাজিয়েছে। রেলসেবা বা ওয়েবসাইটটি থেকে অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কাটার নিয়ম ৩ টি ধাপে সাজানো হয়েছে।
ঘরে বসে ট্রেনের লোকেশান জেনে নিতে আরো পড়ুন
ট্রেনের অবস্থান নির্ণয়: Train location bd
কোন যাত্রীর রেজিষ্ট্রেশন করা থাকলে সার্চ , সিলেক্ট এবং পে এই ৩ টি ধাপ অনুসরন করে খুব সহজেই ট্রেনের টিকিট বুক বা ক্রয় করতে পারবে।
আসল রেলসেবা এপসটি গুগল প্লে ষ্টোর থেকে ডাউনলোড করে নেওয়্য যাবে। নতুবা নানা ধরনের ভুয়া এপসের খপ্পরে পড়ে প্রতারনার শিকার হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।
ট্রেনের টিকিট কাটা Registration প্রক্রিয়া
যেকোন ইউজার রেজিষ্ট্রেশন ছাড়াই সকল ট্রেনের সিট প্ল্যান দেখা যাবে। একবার রেজিষ্ট্রেশন করলে পরবর্তীতে আর রেজিষ্ট্রেশন করার দরকার হবে না। পরে শুধু ইউজার আইডি আর পাসওয়ার্ড দিয়ে লগিন করে ট্রেনের টিকিট কেনা যাবে। ওয়েবসাইট থেকে ট্রেনের টিকিট কাটার জন্য প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার ধাপগুলো নিয়ে আলোচনা করবো।
রাজধানী ঢাকা থেকে সকল ট্রেনের সময়সূচি
একজন ইউজার একবার রেজিস্ট্রেশন করলেই হবে। পরবর্তীতে আগের ইউজার আইডি, পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে লগিন করে টিকিট ক্রয় করতে পারবে।
ইউজার রেজিস্ট্রেশন, সিট বাছাই, পেমেন্ট এবং টিকিট সংগ্রহের প্রক্রিয়াগুলো সঠিক ভাবে সম্পন্ন করতে পারলে অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কাটার নিয়ম খুবই সহজ।
রেলওয়ে যাত্রী সেবা অধিকারের তালিকা
প্রথমেই আমরা রেলওয়ের E-Ticket সিস্টেমে ইউজার রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়াটি ধাপে ধাপে আলোচনা করবো। আপনার কম্পিউটার, ল্যাপটপ, এন্ড্রোয়েড বা যে কোন ডিভাইসের আপনার পছন্দের একটি ব্রাউজার থেকে www.eticket.railway.gov.bd ওয়েব সাইটে প্রবেশ করতে হবে।
ওয়েব সাইটটির মেনু বার থেকে “Register” বাটনে ক্লিক করতে হবে। পুরাতন ইউজার হলে “Login” বাটনে ক্লিক করে ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগিন করতে হবে।
“Register” বাটনে ক্লিক করার পর Verify Your NID ফর্মটি আপনি দেখতে পাবেন।
এখানে প্রথম বক্সে মোবাইল নাম্বার, দ্বিতীয় বক্সে জাতীয় পরিচয় পত্র নাম্বার এবং ৩ নং বক্সে আপনার জন্ম তারিখ সঠিকভাবে লিখে দিতে হবে।
নীচে I am Not a Robot চেক বক্সে একটা ক্লিক করতে হবে । সব তথ্য নির্ভূল হলে নীচের ধূসর হহয়ে থাকা “verify” বাটনটি উজ্জ্বল বর্ণ ধারন করবে। এখন আপনার কাজ হলো “Verify” বাটনে ক্লিক করা।
দেখে নিন একনজরে
ই-টিকেটিং সিস্টেম থেকে তাৎক্ষনিকভাবে আপনার প্রদত্ত মোবাইল নাম্বারে Bangladesh Railway এর থেকে একটি ভেরিফিকেশন কোড ম্যাসেজ আকারে পাঠানো হবে।
পরবর্তী পেজে মোবাইলে পাওয়া ৬ সংখ্যার কোডটি বসিয়ে দিতে হবে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আপনার রেজিষ্ট্রেশন সাকসেসফুল অভিবাদন জানাবে এবং সিস্টেম থেকে একটা ডিফল্ট পাসওয়ার্ড সেট করে দিবে,যা আপনাকে প্রদর্শন করানো হবে।
প্রক্রিয়াটি সঠিকভাবে সম্পন্ন হলে আপনি মেনুবার থেকে “Login” বাটনে ক্লিক করুন। এবার আপনার সামনে Login পেজটি আসবে।
রেজিষ্ট্রেশন করার সময় দেওয়া মোবাইল নাম্বারটি প্রথম বক্সে বসিয়ে দিন। পূর্বে সিস্টেম থেকে পাওয়া পাসওয়ার্ড দিয়ে লগিন করুন।
এবার আপনার সামনে পুরা ইন্টারফেস টা চলে আসবে ।এখান থেকে আপনি ট্রেনের সিট প্ল্য্যান, বুকিং এবং টিকিটের মূল্য পরিশোধ করতে পারবেন।
অনলাইনে ট্রেনের টিকিট বুক করার নিয়ম
যেহেতু আপনি একটু আগেই ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগিন করা অবস্থায় আছেন। তাই আর নতুন করে লগিন করার প্রয়োজন নেই। এখান থেকেই আপনি ট্রেনের টিকিট কাটার নিয়ম মেনে আপনার কাঙ্ক্ষিত টিকিট কাটতে পারবেন।
এখানে আপনি From ও To বক্সে কোথায় থেকে কোথায় যেতে চান লিখুন। নীচের লাইনে প্রথম বক্সে যাত্রার তারিখ লিখুন পরের বক্সে ক্লাস সিলেক্ট করে Searvh বাটনে ক্লিক করুন। উল্লেখ্য যে, একজন ইউজার সর্ব্বোচ্চ ১০ দিন আগে টিকিট কিনতে পারবে।
পরের পেজে আপনাকে আপনার সার্চ রেজাল্ট দেখাবে । অনলাইনে কত সিট বরাদ্দ আছে বা কাউন্টারে কত সিট বরাদ্দ আছে এইসব তথ্য আপনি এখান থেকে জানতে পারবেন।
বরাদ্দ লিষ্ট থেকে যদি আপনি টিকিট কাটতে চান তাহলে ঠিক নীচে “Book Now” বাটনে ক্লিক করতে হবে ,এবার নীচেই সিট প্ল্যান দেখতে পাবেন। সিট প্ল্যান থেকে পছন্দমতো সিট বাছাই করবেন । একই সময়ে আপনি সর্ব্বোচ্চ ৪ টি সিট বুক করার সুযোগ পাবেন।।
ডানপাশে সিট বিবরনীসহ টিকিটের মূল্য দেখাবে, একটু নীচেই “Continue Purchease” বাটনে ক্লিক করতে হবে। ক্লিক করার সাথে সাথে আপনার প্রদত্ত মোবাইল নাম্বারে ৪ সংখ্যার চেরিফিকেশন কোড যাবে। খুব দ্রুত কোডটি এখানে বসিয়ে দিতে হবে।
অনলাইনে ট্রেনের টিকিটের মূল্য পরিশোধ / পেমেন্ট সিস্টেম
বিকাশ, নগদ, রকেট ছাড়াও ক্রেডিট কার্ড, ক্যাশ কার্ড কিংবা ব্রাক ব্যাংকের একাউন্ট মারফত যাত্রির জমাকৃত টাকা থেকে টিকেট মূল্য পরিশোধ করা যাবে এবং যাত্রীর ই-মেইল বা মোবাইল ম্যাসেজের মাধ্যমে ই-টিকেটটি পাঠিয়ে টিকেট নিশ্চিত করা হয়ে থাকে।
ই-মেইল মেসেজ বক্স থেকে প্রেরিত টিকেটটির প্রিন্ট নিয়ে ফটো আইডিসহ ই-টিকেট প্রদত্ত “Ticket Print Information” প্রদান করে সংশ্লিষ্ট সোর্স ষ্টেশন থেকে যাত্রার পূর্বে ছাপানো টিকেট সংগ্রহ করা যাবে।
যদি কোন কারনে গ্রাহক টিকিটের মূল্য পরিশোধ করার পরও টিকিট কনফার্ম না হয় তাহলে সর্ব্বোচ্চ ৪ কর্মদিবসের মধ্যে গ্রাহক তার একাউন্টে টাকা ফেরত পাবেন।
বিকাশের মাধ্যমে অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কাটার নিয়ম
পূর্বেই বলা হয়েছে সিট বাছাই করে Continue Purchese বাটনে ক্লিক করলেই মোবাইল ভেরিফিকেশন শেষে আপনাকে পেমেন্ট পেজ এ নিয়ে যাবে।
দেখানো ধাপগুলো অনুসরন করে সম্পন্ন করতে হবে আপনার ট্রেনের টিকিট ক্রয় করার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারবেন।
পেমেন্ট কনফার্ম হলে এপসের হিস্টরি বাটনে/মোবাইল এসএমএস অথবা ইমেইলে আপনার ই-টিকিট টি পেয়ে যাবেন।
ট্রেনের টিকিট সংগ্রহ
দেখানো ধাপগুলো শেষ পর্যন্ত অনুসরন করতে পারলে আপনি আপনার প্রথম অনলাইনে টিকিট ক্রয় করার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারবেন।
প্রদত্ত নির্দেশনা মোতাবেক পেমেন্ট করার পর আপনার কাজ প্রায় শেষ। আপনার ফোন এসএমএস বা ইমেলে আসা টিকিটের পিডিএফ ফাইলটি হাতের কাছের কোন কম্পিউটারের দোকান থেকে ডাউনলোড করে প্রিন্ট করে ট্রেনের টিকিট সংগ্রহ করা সম্পন্ন করুন অথবা যাত্রার ৬ ঘন্টা আগে ষ্টেশন কাউন্টার থেকে প্রিন্ট করে নিতে পারবেন।
যদি কোন কারনে আপনার ইমেইল ইনবক্সে টিকিটের পিডিএফ কপি খুজে না পান তবে ইমেইলের “Junk” অথবা “Spam” ফোল্ডারগুলো চেক করুন।
অগ্রীম ট্রেনের টিকিট কাটার কিছু টিপস
প্রথমেই বলে রাখি অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কাটার নিয়ম মেনেও টিকিট না পাওয়ার ঘটনা অনেক ভুক্তভোগীর সাথে ঘটে থাকে। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে শোনা যায় অনলাইনে টিকিট নাকি পাওয়া যায় না অথবা সব সিট বুক দেখা যায়।
এক্ষেত্রে একটা সহজ উপায় হলো টিকিট সার্চ করার সময় শুধু আপনার প্রারম্ভিক ষ্টেশন ছাড়াও From বক্সে আশে পাশের ষ্টেশন গুলোর নাম লিখে সার্চ করে দেখুন। আশা করি কোন না ষ্টেশন থেকে আপনি সিট ফাকা পেয়ে যাবেন।
এক্ষেত্রে আরেকটি সহজ সমাধান হলো রেলসেবার এপ্লিকেশনে টিকিট বুকিং এবং অগ্রীম ট্রেনের টিকিট ক্রয় করার সময় শুরু হয় সকাল ৮ টায়।
অই সময়ের আগেই প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট এবং বিকাশ একাউন্টে পর্যাপ্ত ব্যালান্স রেখে অনলাইনে ট্রেনের টিকিট ক্রয় করার চেষ্টা করা হলে আশা করি টিকিট পাওয়া সহজ হবে।
অনলাইনে ট্রেনের অগ্রীম টিকিট কাটার সময় ঠিক কখন শুরু হয় এটা বুঝতে পারলে আপনি অবশ্যই অনলাইন থেকে ট্রেনের টিকিট ক্রয় করতে পারবেন।
টিকিট ছাড়ার নিদির্ষ্ট দিন বের করে ঠিক সকাল ৮ টায় আপনি অনলাইনে ট্রেনের টিকিট বুকিং এবং ক্রয় করার চেষ্টা করলে আশা করি আপনি সফল হবেন।
শেষকথা
যেহেতু সরকারি সিদ্ধান্ত মোতাবেক ট্রেনের টিকিট শুধুমাত্র ওয়েবসাইট এবং কাউন্টার ছাড়া অন্য কোন ভাবে সংগ্রহ করার সুযোগ নেই সেহেতু ট্রেনের টিকিট নিঝঞ্ঝাটে সংগ্রহ করতে হলে নির্দিষ্ট ওয়েবসাইট থেকেই করতে হবে।
তবে উপরে বর্নিত কৌশল গুলো খাটিয়ে আপনিও অনলাইন থেকে টিকিট কাটতে পারবেন আর এতে আপনি অনেক গুলো ভোগান্তির হাত থেকে বেচে গেলেন।
যদিও অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কাটার নিয়ম একটু জটিল তথাপি দেখানো ধাপ গুলো অনুসরন করে অনলাইন থেকে টিকিট কাটা সম্ভব।
আপনার যাত্রা শুভ হোক।
Comments are closed.