চেঙ্গিস খান

চেঙ্গিস খানের ইতিহাস পর্ব-১

অজানা রহস্য আন্তর্জাতিক
বর্তমান বিশ্বে এক কোটি চল্লিশ লক্ষ মানুষের মধ্যে যার জীন বিদ্যামাণ, তিনি হলেন মঙ্গলদের নেতা চেঙ্গিস খান! জিততে জিততে প্রায় পুরো পৃথিবী জিতে নিয়েছিলেন তিনি।

 

ইতিহাসের অতি অমনোযোগী ছাত্রও কয়েকটা চরিত্রের নাম মনে রাখবেই। তারমধ্যে চেঙ্গিস খান অন্যতম।বাঙালি মানসে এই নাম কখনোই ভুলবার নয়।
কাজী নজরুলের বিদ্রোহী কবিতায় পাই…
আমি বেদুইন আমি চেঙ্গিস
আমি আপনারে ছাড়া কাহারে করিনা কুর্নিশ…
ইতিহাস মনে রাখি না রাখি এই কবিতা বারবার পড়ি।

 

 

রাজা রাজরাদের ক্ষমতার কথা উঠলেই কে কতদূর সাম্রাজ্য বিস্তার করেছিল সেটা তার বীরত্বের পরিচায়ক।আলেকজান্ডার এর থেকে চারগুন আকারের সাম্রাজ্য তৈরি করতে পেরেছিল চেঙ্গিস। রোম সাম্রাজ্যে ও খলিফা তন্ত্রের থেকে দ্বিগুণ। কোরিয়া থেকে পোল্যান্ড পর্য্যন্ত। ক্ষমতা প্রদর্শন করতে গিয়ে কত মানুষকে হত্যা করেছিল শুনবেন? চার কোটি মানুষ। ইতিহাস তাই বলে।
ভারত বিজয় করতে এসেছিল বটে কিন্তু করতে পারেনি। আফগানিস্তান পর্য্যন্ত বিস্তার হয়েছিল। ভারতে ঢোকার মুখে তদানীন্তন রাজা আলাউদ্দিন খিলজির সাথে লড়াই বেঁধে ছিল। শোনা যায় বিজয়ী আলাউদ্দিন চেঙ্গিসের পরবর্তী কোন মঙ্গল অধিপতির কুড়ি হাজার সেনার মুন্ডুপাত করেছিল। কোন ইতিহাস চর্চার জন্য এই পোস্ট নয়। বলতে পারেন নিছক ইনফোটেইনমেন্ট ।

 

ঐতিহাসিকরা বলে চেঙ্গিস খান যে দেশে গেছে সেই দেশকে শ্মশানে পরিণত করেছে বেশ কয়েক দশকের জন্য। শুরুতে ছিল এক ট্রাইবের নেতা। মঙ্গল উপজাতি। 44 বছর বয়সে তাদের সর্দার হয়। তারাই তাকে চেঙ্গিস উপাধি দেয়। অর্থ Universal Ruler । কেউ বলে চেঙ্গিস নাকি শহর সভ্যতা একদম পছন্দ করত না। তাই শহর বিনাশ ছিল তার অন্যতম উদ্দেশ্য। গ্রামীণ সভ্যতা ছিল পছন্দের।

 

 

আদতে মঙ্গল উপজাতি ছিল সম্পূর্ন অশিক্ষিত,বর্বর। মঙ্গলদের সম্পর্কে শোনা যায় তারা প্রতিদিন একলিটার মত রক্ত পান করত। আরো জানা যায় মানুষের মাংসও খেত। কয়েক মিনিটের মধ্যে একটি মানুষ নিঃশেষ করত। চেঙ্গিস সম্পর্কে বলতে গিয়ে ঐতিহাসিকরা বেশ কিছু পরস্পর বিরোধী মন্তব্য রেখেছে। কেউ বলে চেঙ্গিস হল ইতিহাসের এক অভিশাপ। চেঙ্গিস হল মৃত্যু আর ধ্বংসের প্রতীক। আজও নাকি কিছু দেশে শিশুদের ভয় দেখানোর জন্য চেঙ্গিসের নাম নেওয়া হয়। উল্টো দিকে ভু পর্যটক মার্কো পোলো তেমন কিছু মনে করেনা। মনীষী রজার বেকন চেঙ্গিস কে তেমন কিছু অভিশাপ মনে করেনা।

 

 

চেঙ্গিস খান এর যুদ্ধ কৌশল খুবই প্রশংসা কুড়িয়েছিল। অনেকেই তার অনুকরণ করেছে। আরো এক বিষয় হল কোন দেশ তারা স্থায়ী ভাবে দখলে রাখেনি। তবে যে পরিমান লুন্ঠন করেছিল তা ইতিহাসে নজিরবিহীন। চেঙ্গিসের প্রশাসন / বুরক্রাসি ভীষণ দক্ষ ছিল। কাগজি মুদ্রা চালু করেছিল। মুদ্রার উপর অনেক গুলি ভাষায় লেখা থাকত। দ্রুতগতি যোগাযোগ ব্যবস্থা, কম্পাসের ও উন্নতমানের কামানের মসলা, ইন্টেলিজেন্ট নেটওর্য়াক ইত্যাদি তার আমলেই সৃষ্টি। সবচেয়ে বড় কথা পাসপোর্ট প্রথা চালু করেছিল। সিল্ক রুট কে ভীষণ ভাবে কার্যকারী করেছিল চেঙ্গিস। খ্রিস্টান, মুসলিম ,বৌদ্ধ ,হিন্দু ইত্যাদি বিভিন্ন ধর্মীয় মানুষদের মধ্যে ব্যবসায়িক আদানপ্রদান গড়ে উঠেছিল।
চেঙ্গিসের পূর্বপুরুষরা যে ধর্ম পালন করত সেটাই মেনে চলত, Tengrism। বলা যায় প্রকৃতি মেনে চলা। মঙ্গলদের একটা কথা হল Kukh Tanvir , মানে বিশাল নীল আকাশ। চেঙ্গিসের তৃতীয় প্রজন্মের একটি শাখা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিল।চেঙ্গিস সকল ধর্মের সহঅবস্থান মেনে চলত। ইসলাম ধর্মের প্রায় সকল প্রথাকে স্বীকৃতি দিলেও কয়েকটি মানত না। যেমন হজ যাত্রা, হালাল প্রথা । তার মতে এগুলি অপ্রয়োজনীয়। অনেক ইতিহাসবিদ চেঙ্গিস কে খুব বাস্তববাদী( Pragmatic) বলে থাকে। কেউ কেউ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সম্রাটের আখ্যা চেঙ্গিসখান কেই দিয়ে থাকে।

 

চেঙ্গিস খান সম্পর্কে আরো জানতে পড়ুন
চেঙ্গিস খান এর মূল পত্নী ছিল ছয়জন। তাছাড়া উপপত্নী র সংখ্যা ছিল পাঁচশর অধিক। চেঙ্গিস সম্পর্কে কত গল্পই শোনা যায়। একবার প্রতিবেশী উপজাতি তাতার দের হারিয়ে তাদের সর্দারের এক মেয়েকে বিবাহ করে। সেই মেয়েটি আবার তার দিদিকে বিবাহ করতে অনুরোধ করে। ফলে তার দিদিকেও বিবাহ করে চেঙ্গিস। অন্য সকল তাতার মহিলাদের চেঙ্গিসের অধীনস্ত কর্মচারীদের মধ্যে বিতরণ করে।