চেঙ্গিস খানের ইতিহাস

চেঙ্গিস খানের ইতিহাস পর্ব-২

অজানা রহস্য আন্তর্জাতিক
লক্ষ লক্ষ মানুষের রক্ত গঙ্গা বইয়ে দিয়ে প্রায় পুরো পৃথিবীর সম্রাট হতে চেয়েছিলেন বলে চেঙ্গিস খানের ইতিহাস থেকে জানা যায়। ১২২৭ সালে তিনি মারা যান।

 

এটা স্বীকৃত যে বিজিত দলের সমস্ত সম্পত্তি বিজয়ীদের হাতে চলে আসে। স্বাভাবিক ভাবে রাজ্যের সকল নারী তাদের ভোগ্য বস্তু হয়ে যায়।
বেশ কিছুদিন আগে মানুষের মধ্যে জীন ( gene) এর প্রবাহ সম্পর্কে কয়েকটি গবেষণা পত্র বেরিয়েছে। সেটা থেকে একটা সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে গবেষকরা। তা হল বিশ্বে কম করে এক কোটি ষাট লক্ষ মানুষের রক্তের মধ্য চেঙ্গিস খানের জীন বর্তমান।
পুরাতন মঙ্গোলিয়া অঞ্চলে আট শতাংশ মানুষের Y ক্রোমোজোমের মধ্যে প্রায় একই ধরনের মিল পাওয়া গেছে । চেঙ্গিসখানের বড় ছেলে Tushi ( Jochi) তার নিজের চল্লিশ টি পুত্র ছিল। চেঙ্গিসখানের পরিবারকে Golden Family বলা হয়। অনেক ক্ষেত্রেই একই পরিবারের মধ্যে বিবাহ হত।
চেঙ্গিস খানের জীন প্রবাহের কথা গবেষণায় উঠে এল কিভাবে? সারা পৃথিবীতে gene প্রবাহের উপর গবেষণা বেশ কিছুদিন ধরেই চলছে। চেঙ্গিসখান সম্পর্কিত গবেষণার মূল ইঙ্গিতটা এসেছিল পাকিস্তানে বসবাসকারী হাজারা ( Hazara) সম্প্রদায় থেকে। তাদের দাবি ছিল যে তারা নাকি সরাসরি চেঙ্গিসখানের বংশধর।
অবশ্য বহুদিন ধরেই নিজেদের গোষ্টিকে চেঙ্গিসখানের বংশধর বলার একটা গৌরব অনেকেই বহন করে। দৈহিক বৈশিষ্ঠ্য, চোখের রং বা গাত্রবর্ণ ইত্যাদি মিল থাকা কিছুটা চিন্হ বহন করলেও শেষ কথা কেবলমাত্র gene সাদৃশ্য দিয়েই বৈজ্ঞানিক প্রমান সম্ভব।
Gene বিশ্লেষণ প্রায় চল্লিশ টি জনগোষ্ঠীর মধ্যে চালানো হয়েছিল। আমরা জানি পুরুষদের মধ্যেই Y ক্রোমোসোম পাওয়া যায়। পিতা থেকে পুত্রের মধ্যে এই Y ক্রোমোসোম সঞ্চারিত হয় (Haplotype) । Y ক্রোমোসোম এর মধ্যে থাকা কোন অংশ অন্য কারোর সাথে যুক্ত/বিযুক্ত ( Recombination) হয়না।
যা হয় সেটা হল Y ক্রোমোসোম এর মধ্যে থাকা কিছু chunk of DNA এর মধ্যে কোন random mutation । সেক্ষেত্রে DNA এর point mutation ঘটে।এই ধরণের mutation সাধারণত ক্ষতিকারক হয়না। পরিবর্তে এই পরিবর্তন এক বিশেষ চিন্হ (marker) হিসাবে গণ্য করা হয়।
এবং এই point mutation ( marker) বংশ পরম্পরায় চলতে থাকে। Y ক্রোমোজোমের মধ্যে থাকা এই ধরণের বৈশিষ্ট্য অনেক পুরুষ মানুষের মধ্যে পাওয়া গেল। ।
এই চিন্হ কে আধার করে বিজ্ঞানীরা সময়ের পিছন দিকে যাত্রা শুরু করলে ধরতে পারে প্রথম কখন এই mutation ঘটেছিল। সময়টা দাঁড়ায় প্রায় এক হাজার বছর আগে এমন ঘটনা ঘটেছিল। প্রতি 25 বছরে এক প্রজন্ম ধরা হয়েছে।
বিজ্ঞানীরা পেলেন এর শুরু ঘটেছিল চেঙ্গিস খানের মধ্যে। আসলে বিজ্ঞানীরা একটা সময় এর হিসাব পেয়েছেন। সেটা মোটামুটি চেঙ্গিসখান এর সময়।
এখানে একটা সম্ভবনা উড়িয়ে দেওয়া যায়না যে বিশেষ চিন্হ টি হয়ত চেঙ্গিসখানের বাবা বা ঠাকুরদার দেহে এসেছিল। সেটা অবশ্য আমাদের আলোচনায় গৌণ।
তত্ত্বগত আলোচনায় আমরা চেঙ্গিসখান পৌছালাম ঠিকই। কিন্তু যতক্ষন পর্য্যন্ত না চেঙ্গিসখান দেহ থেকে gene মিলিয়ে না দেখা হচ্ছে ততক্ষণ বৈজ্ঞানিক ভাবে স্বীকৃতি পাচ্ছেনা। খোঁজ চলছে তার কবর উদ্ধারের।
সেখানেও এক রহস্য। অবাক লাগে এখনো পর্য্যন্ত চেঙ্গিসখানের কবর এর রহস্য উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি যদিও চেষ্টার কোন ত্রুটি নেই। এই কবর কেন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা তারসম্পর্কে বেশ কিছু গল্পকথা আছে।
1227 সালে চেঙ্গিস এর মৃত্যু ঘটে।কিভাবে মৃত্যু ঘটেছিল সেটা সম্বন্ধেও অনেক কাহিনী আছে। কেউ বলে যুদ্ধক্ষেত্রে আহত হবার পর সংক্রমণ এর কারণ। কেউ বলে সরাসরি শত্রুর আঘাতে। কেউ বলে কোন এক স্ত্রী তাকে গুপ্তখুন করে। ইত্যাদি ইত্যাদি।
চেঙ্গিসখানের শোক মিছিল,কবর দেওয়া ইত্যাদি কাজে যারা অংশগ্রহণ করে তাদের সকলকে হত্যা করা হয় যাতে কেউ কখনো জানতে না পারে চেঙ্গিসখান কে কোথায় কবর দেওয়া হয়েছে। এতটাই গোপনীয়তা মেনে চলা হয়েছিল। নির্দেশ তেমনই ছিল।
কথিত আছে যে নদীর ধারে কোথাও কয়েকটি পাথরের আড়ালে তাকে কবর দেওয়া হয়েছে কারণ সেখানেই প্রথম জীবনে শত্রুর হাত থেকে বাঁচার জন্য একবার লুকোতে হয়েছিল। তখন সে বলেছিল সে নাকি মৃত্যুর পর সেইস্থানে আবার ফিরে আসবে।
অন্য এক লোককথায় আছে… যে স্থানে তাকে কবর দেওয়া হয়েছে ,তার কবরের উপর দিয়ে নদীর গতিপথ পরিবর্তন করে প্রবাহিত করা হয়েছে তার কবর গোপন রাখতে।
চেঙ্গিস খান এর জীবনী থেকে জানা যায়, চেঙ্গিসখান চাইত না তার কোন ছবি আঁকা হোক বা মূর্তি নির্মাণ করা হোক। তার মৃত্যুর 50 বছর পর কল্পনা করে তার ছবি আঁকা হয়।
সুখের কথা হল কিছুদিন আগে চেঙ্গিসখানের প্রাসাদ এর খোঁজ পাওয়া গেছে।
চেঙ্গিস খান সম্পর্কে আরো জানতে পড়ুন
আশা করা হচ্ছে সেখানেই কোথাও হয়ত কবরের সন্ধান পাওয়া যাবে।ততদিন পর্য্যন্ত বৈজ্ঞানিক সত্যতা প্রতিষ্ঠা অপেক্ষায় থাকতে হবে।ততদিন পর্যন্ত চেঙ্গিস খানের ইতিহাস অপূর্ন থেকে যাবে।