নবি ইউসুফ

নবি ইউসুফ আলাইহিস সালামকে মন্ত্রীর পদে আসীন করেছেন

অজানা রহস্য আন্তর্জাতিক ভ্রমণ
নবি ইউসুফ আলাইহিস সালামকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া’তায়ালা মিশরের মন্ত্রীর পদে আসীন করেছেন। কিন্তু দেখুন— মর্যাদার এই স্তরে উন্নীত করতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া’তায়ালা ইউসুফ আলাইহিস সালামকে কতো তীব্র পরীক্ষার মুখোমুখি করেছিলেন।

 

ছোটবেলায় ভাইদের দ্বারা অন্ধকার কূপে নিক্ষিপ্ত হওয়া, বনিকদলের দ্বারা অন্যত্র ক্রীতদাস হিশেবে বিক্রি হয়ে যাওয়া, বাদশাহর স্ত্রীর অশালীন প্রলোভন এবং সর্বোপরি জেল!
কী এক তীব্র সংকট আর সংগ্রামের মধ্য দিয়েই না কেটেছে নবি ইউসুফ আলাইহিস সালামের সেই দিনগুলো! কিন্তু দৃশ্যপটের শেষটা কেমন ছিলো?

 

আমরা জানি, ইউসুফ আলাইহিস সালাম জীবনের একটা পর্যায়ে এসে সেসবকিছুই পুনরায় ফিরে পেয়েছেন যা তিনি একদিন হারিয়েছিলেন।
তাঁর দয়াময় পিতা, ভাই এবং পরিবার। মিশরে একদিন অসহায় ক্রীতদাস হিশেবে যে বালক প্রবেশ করেছিলো, নির্দিষ্ট সময়ের পর আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া’তায়ালা তাঁকে আসীন করে দিলেন সেখানকার অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ পদে। তাঁকে নবুয়্যাত দান করলেন এবং পৃথিবীতে অধিষ্ঠিত করলেন একজন সম্মানিত নবি হিশেবে।

 

মুসা আলাইহিস সালামের জন্য যিনি দরিয়ায় পথ তৈরি করে দিয়েছিলেন, একদিন তিনিই কিন্তু তাঁকে দরিয়ায় নিক্ষেপ করার আদেশ করেছিলেন।
নবি ইউনুস আলাইহিস সালামের মাছের পেটের ভেতর থেকে বেঁচে আসাটা আমাদের পুলকিত করে। কিন্তু সেই পুলকের পেছনের কার্যকারণ কতোখানি ভীতি-জাগানিয়া তা কি ভেবেছি কখনো?

 

গভীর সমুদ্রতলে, সেই বিশালকায় মাছের পেটে, যেখানে দুনিয়ার কোন শব্দ, কোন আওয়াজ পৌঁছে না, যেখানে বিস্তৃত জায়গাজুড়ে কেবল অন্ধকার আর অন্ধকার— এমন পরিস্থিতিতে আরশের অধিপতি নবি ইউনুস আলাইহিস সালামের জন্য যথেষ্ট হয়ে গেলেন।
তিনি যথেষ্ট হলেন ঠিক-ই, তবে নবি ইউনুস আলাইহিস সালামকে একটা সুকঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি করার পরে।

 

আপনি হয়তো কোন একটা সংগ্রামের ভেতর দিয়ে যাচ্ছেন। হতে পারে সেই সংগ্রাম ভীষণ দুঃসহ! প্রিয় কোন মানুষকে জীবন থেকে হারিয়ে ফেলার যন্ত্রণায় আপনি হয়তো দগ্ধ। কোন অপ্রিয় বিচ্ছেদ-ব্যথায় হয়তো আপনি ভীষণ নাজেহাল। অনাকাঙ্ক্ষিত কোন সমস্যা হয়তো আপনাকে কুরে কুরে খাচ্ছে। হতে পারে জীবন আপনার ছক অনুযায়ী চলছেই না।

 

হ্যাঁ, জীবনের এই সংগ্রামে আপনি ক্লান্ত হতে পারেন মাঝে মাঝে। তবে হতোদ্যোম হবেন না। বিচ্ছেদ-ব্যথায় আপনি কাঁদতেও পারেন, যেভাবে ইউসুফ আলাইহিস সালামকে হারিয়ে কাঁদতে কাঁদতে চোখের জ্যোতি হারিয়েছিলেন ইয়াকুব আলাইহিস সালাম।
কাঁদুন, অশ্রু ঝরান, ব্যাকুল হোন— কিন্তু কখনোই আল্লাহকে অভিযুক্ত করবেন না। ধৈর্য রাখুন। আপনার জীবনের যে অংশটা এখনো বাকি, যে অংশে আপনার জন্যে কী অপেক্ষা করে আছে তা আপনি জানেন না— তার জন্যে আল্লাহকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাবেন না।
মাছের পেটে বিলীন হয়ে ইউনুস আলাইহিস সালাম আল্লাহকে অভিযুক্ত করেন নি। শিশু মুসা আলাইহিস সালামকে দরিয়ায় নিক্ষেপ করে তাঁর মা অভিযোগের তীর ছুঁড়ে দেয়নি আল্লাহর দিকে।
প্রিয়তম পুত্র ইউসুফকে হারিয়ে ভীষণ বিচ্ছেদে কাতর হয়ে পড়ার পরেও একটাবারের জন্য আল্লাহর ওপর থেকে ভরসা হারান নি নবি ইয়াকুব আলাইহিস সালাম।
তিনি এতো কেঁদেছিলেন যে— তার চোখের জ্যোতি পর্যন্ত চলে গিয়েছিলো। কিন্তু অন্তরের গভীরে তাঁর ছিলো আল্লাহর ওপর টইটম্বুর তাওয়াক্কুল।
তিনি জানতেন— আল্লাহ নিশ্চয় একটা সুন্দর পরিণতির দিকে তাঁকে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন।
জীবনের সাময়িক চিত্রনাট্যে বিলীন হয়ে যাবেন না। ধৈর্যের সাথে অপেক্ষা করুন। রাত পোহালে একটা সুন্দর সকাল আপনার জীবনটাকেও রাঙিয়ে যাবে।